ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

জেলায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধনের কারণে উপবৃত্তি শংকায়

এম. বেদারুল আলম, কক্সবাজার :: আপনারা সাংবাদিক। আপনার একটু লিখতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের জন্য যেন জন্ম নিবন্ধন টা সহজ করে দেয়। আগামী ১৭ জানুয়ারির মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দিতে না পারলে কোন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাবে না। আমরা তাগাদা দিচ্ছি বারবার অভিভাবকদের কিন্তু তেমন সাড়া পাচ্ছি না। জন্ম নিবন্ধন জমা দিতে না পারলে উপবৃত্তি বঞ্চিত হবে অনেক শিক্ষার্থী। যার ফলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলার ধাওনখালী রহমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী।

মুহসিনিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান- জন্ম নিবন্ধন ছাড়া আমরা উপবৃত্তির ডাটা এন্ট্রি করতে পারছিনা। আমার ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দেয়নি। অভিভাবকদের কষ্ট দেখে আমরা শিক্ষকরা ও দুঃচিন্তায় পড়েছি। যথা সময়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ পাওয়া নিয়ে শংকায় রয়েছি।

জেলায় জন্ম নিবন্ধন সনদ যথা সময়ে না পাওয়ায় উপবৃত্তির টাকা পাওয়া নিয়ে আশংকায় ৬৯৯টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। রোহিঙ্গা আসার পর কক্সবাজারে জন্ম নিবন্ধন সনদ পাওয়া জটিল হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারছেনা। ফলে শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন সনদের অভাবে উপবৃত্তির সুফল পাওয়া থেকে বাদ পড়ছে উক্ত ক্ষুদে ছাত্র ছাত্রীরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপবৃত্তির দায়িত্ব প্রাপ্ত মনিটরিং অফিসার মোঃ কবির হোসেন জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ১২৫ জন শিক্ষার্থীকে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ২৫০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এখন চলছে এপ্রিল থেকে জুনের কিস্তি দেয়ার জন্য প্রস্তুতি। এবার জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামুলক এবং ২০১৯ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় উপকার ভোগীকে ৪০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পভুক্ত শিক্ষার্থীর তথ্য, আবেদন ১৭ জানুয়ারির মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর তালিকা চুড়ান্ত করা হবে। প্রাক প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শতভাগ উপবৃত্তির আওতায় আসবে। ২য় থেকে ৫ ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ২০১৯ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। আগে উপবৃত্তির টাকা শিওরক্যাশে অভিভাবকদের মোবাইলে প্রদান করা হলেও এবার দেয়া হবে সরকারি অপারেটর নগদে। এজন্য মায়ের এনআইডি, শিশুর জন্ম নিবন্ধন, মোবাইল নম্বর বাধ্যতামুলক। আগামী ১৭ জানুয়ারি অনলাইনে উক্ত ডকুমেন্টস সহ আবেদন করতে হবে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন সনদ পেতে চরম ভোগান্তি এবং সময়ক্ষেপনের কারণে বেশিরভাগই আবেদন করতে পারেনি জন্ম নিবন্ধনের অভাবে।

কক্সবাজার পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্র হোজাইফ মোহাম্মদ রাইনুকের অভিভাবক মোঃ রেজাউল করিম চকরিয়া নিউজকে জানান, স্কুল থেকে বার বার জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য বলা হলেও এখনো জমা দিতে পারিনি। পরিষদে জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন করতে গেলে আগে মা বাবার জন্ম নিবন্ধন করতে বলা হয়। সেটা করতে গেলে আরো কঠিন নিয়মে পড়তে হচ্ছে। এখন শেষমেশ জন্ম নিবন্ধন করা না হলে আমার ছেলেটা উপবৃত্তি থেকে বাদ পড়ে যাবে। আমার ছেলের মত অনেক শিক্ষাথী জন্ম নিবন্ধন সনদ না পেয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে যাবে। তিনি জন্ম নিবন্ধন প্রাপ্তি সহজ করার দাবি জানান।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২০ এর কিস্তিতে কক্সবাজার সদরে ২৪৫৮৬ জন, রামুতে ১৯৮৮৫ জন, চকরিয়া ২৮২৯৩ জন, পেকুয়া ১৭৯৯১ জন,কুতুবদিয়া ১২৪৩৮ জন, মহেশখালী ২৯২১০ জন, উখিয়া ২১৯৩২ জন এবং টেকনাফ ১৪১০৯ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়।

চলমান এপ্রিল থেকে জুনের কিস্তিতে উপকারভোগী সমান সংখ্যক হতে পারে। সরকার প্রতি মাসে প্রাক প্রাথমিকে জনপ্রতি ৭৫ টাকা, ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১৫০ টাকা করে প্রদান করে।
এদিকে উপবৃত্তি পাওয়া নিয়ে জটিলতা এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি তাদের নিয়োজিত মনিটরিং অফিসারের সাথে কথা বলার জন্য বলেন। প্রসঙ্গত দেড় লাখ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তি সহজ করা জরুরি। অন্যতায় সরকারি সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হলে প্রাথমিকে ঝরে পড়া রোধ করা কঠিন হয়ে যাবে।

পাঠকের মতামত: